ফেলা আসা দিনগুলো

 


 জামতলীর দিনগুলো... 

 গ্রামে ফারুক নামে আমার এক প্রতিবেশী আছে। কৈশোরের দিনগুলোর বড় একটা অংশ তার সাথেই কেটেছে। চৈত্রী দুপুরে- ছাতিফাটা রোদে মাঠ-ঘাট যখন খাঁ খাঁ করতো— মা আমাকে বিছানায় নিয়ে ঘুমপাড়ানি গানে, মাথায় হাত বুলিয়ে দিতো। আমিও চক্ষুবুজে চুপকরে থাকতাম। মায়ের হাতটা যখন থেমে যেতো, চোখমেলে দেখতাম- মা ঘুমিয়ে পড়েছে। পা টিপে টিপে বেরিয়ে আসতাম। এসে দেখতাম ঘরের পিছনে সজীব, মীম ও নাঈমসহ ফারুক আমার জন্য অপেক্ষা করছে। তারাও ঘুমফাঁকি দিয়ে পালিয়ে এসেছে। ফারুকের নেতৃত্বে ধানক্ষেত পেরিয়ে ছুটে যেতাম খাঁ-দের খেজুর বাগানে— সেখানে বড়সড় একটা জামগাছ আছে। ধানক্ষেতের ভেপসা গরম, মাথার উপর কাঠফাটা রোদ এরমাঝে আলপথে হেঁটে চলা! টসটসে লাল হয়ে যেতাম। কপাল বেয়ে টপটপ করে ঘাম ঝরতো। জামের নেশায় তখন এসব কিছুই মনে হতো না। জামতলীতে এসেই ধপ্ করে বসে পরতাম। আর ফারুক কয়েক লাফেই জামগাছের মাথায় উঠে যেতো। যেকোনো গাছ বাইতে বড্ডপটু সে! তারপর উঠতো— নাঈম, সজীব ও মীম। সবার শেষে উঠতাম আমি। ফারুক, নাঈম আর সজীব গাছের মগডাল থেকে থোকা থোকা জাম নিয়ে আসতো। মীম ও আমি সেগুলো জমা করতাম। সাথে নিয়ে যাওয়া পলিথিন ভরে গেলে, ফারুক ও নাঈম জামগুলো নিয়ে আগে নেমে যেতো। তারপর আমরা নেমে আসতাম। জামতলীতে বসে জামগুলো সমানভাবে ভাগ করতাম। কেউ কোন অংশে কমবেশি করতাম না। তারপর প্রাপ্ত জামগুলো কলাপাতা কিংবা কচুপাতায় মুড়িয়ে নিয়ে আলপথে ছুটে যেতাম পাকুড়তলীতে। পাকুড়ের শিকড়ে বসে বসে জাম খেতাম আর পা-গুলো ঝুলিয়ে দিতাম পুকুরের পানিতে! পাকুড়গাছে পাখিদের হৈচৈ, পানিতে রোদের কিরণ, আর স্নিগ্ধ বাতাসে কাঁচা ধানের মৌ মৌ গন্ধ ভেষে আসতো! আহ, কী-যে ভালো লাগত!! রূপকথার নানান গল্পে মেতে যেতাম আর জামের বিচি দিয়ে পানিতে ঢিলছুড়ার প্রতিযোগিতা করতাম। এভাবেই কেটে যেতো গ্রীষ্মের দুপুর...

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

ফুটপাতে শুয়ে থাকা লোকটাও মানুষ। সুতরাং তাকে দেখে নাক ছিটকাবেন না।

স্মৃতিগুলো আজ মনের গহীনে লুকিয়ে আছে...

শৈশবের সেই নির্মল আনন্দ, কৈশোরের দুরন্তপনা, আর তারুণ্যের দুঃসাহসী স্বপ্ন—সব মিলিয়ে এক মায়াবি জগতের মধ্য দিয়ে এসেছি। কত আশা, কত স্বপ্ন, কত অভ...

জনপ্রিয়গুলো দেখুন