স্মৃতিগুলো আজ মনের গহীনে লুকিয়ে আছে...


শৈশবের সেই নির্মল আনন্দ, কৈশোরের দুরন্তপনা, আর তারুণ্যের দুঃসাহসী স্বপ্ন—সব মিলিয়ে এক মায়াবি জগতের মধ্য দিয়ে এসেছি। কত আশা, কত স্বপ্ন, কত অভিমান—সব একে একে গলে গিয়ে নতুন রূপ নিয়েছে। এক সময় যে দুঃখগুলো বুকের ভেতর কাঁটার মতো বিধতো, আজ তারা ম্লান স্মৃতি হয়ে গেছে।

জীবনের প্রতি এখন আর কোনো অভিযোগ নেই। কারণ জীবন নিজেই এক শিক্ষক, যে তার কঠোর শিক্ষায় আমাদের ধৈর্য ধরতে শেখায়। ব্যর্থতা, হারানো মানুষ, অপূর্ণতা—সবই একেকটি গল্প হয়ে গেছে, যা হৃদয়ের অলিন্দে জমা থাকে। একসময় যে ক্ষতগুলো যন্ত্রণায় কুঁকড়ে দিত, আজ সেগুলো অভিজ্ঞতার আলো হয়ে জ্বলছে।

তুমি নিঃসঙ্গ, তুমি একেলা

 

সবকিছু ভেবে দেখলাম, আরে! আমি যাকে ভয় পাচ্ছি, যাকে লজ্জা করছি, যার জন্য নিজেকে সুন্দর, সুশ্রী, পরিপাটি ও গুছিয়ে নিচ্ছি— এর শেষটাতে কী? পরিশেষে কী-বা হবে এই আয়োজনে? উত্তর খুঁজতে গিয়ে নিজেকেই খুঁজে পেলাম। সব আয়োজন বৃথা ভেবে নিয়ে নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত হলাম। এখন আর কারো ভালোলাগা-মন্দলাগায় যায় আসে না। নিজেকে আর কারো জন্য গোছাতে যাই না। নিজেকে কারো জন্য প্রস্তুত করি না। ভালোলাগছে যা, করছি তা। কারো কথায় নাক গলাতে যাই না। নিজেকে বোঝালাম- বেলাশেষে তুমি নিজেরও থাকবে। তুমি নিঃসঙ্গ। তুমি একেলা।

-টিএসসি, ঢাবি ক্যাম্পাস।

বাসন্তী কোকিল

 তুমি বসন্তের কোকিল, বেশ লোক। যখন ফুল ফুটে, দক্ষিণ বাতাস বহে, এ সংসার সুখের স্পর্শে শিহরিয়া উঠে, তখন তুমি আসিয়া রসিকতা আরম্ভ কর। আবার যখন দারুণ শীতে জীবলোকে থরহরি কম্প লাগে, তখন কোথায় থাকো বাপু? যখন শ্রাবণের ধারায় আমার চালাঘরে নদী বহে, যখন বৃষ্টির চোটে কাক-চিল ভিজিয়া গোময় হয়, তখন তোমার মাজা-মাজা কালো-কালো দুলালি ধরনের শরীরখানি কোথায় থাকে?
তুমি বসন্তের কোকিল, শীত বর্ষার কেহ নও।

জোসনা রাতে পুকুরপাড়ে...

 

নিস্তব্ধ গ্রামের রাত্রী। ঝিঁঝি পোকার শব্দে নির্জন পুকুরপাড়টা সচকিত হয়ে উঠেছে।

আকাশে একফালি চাঁদ হেঁসে উঠেছে।

দূরপল্লী থেকে কুকুরের ঘেউঘেউ ডাক ভেষে আসছে।

মৃদু বাতাসের ঝাপটায়, তেঁতুলগাছের পাতাগুলো দুলছে। পুকুরের পানিতে আধখানা চাঁদ ভেষে উঠেছে;

থেকে-থেকে মাছেদের ঝাপটায় আবার তাহা বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ছুটেচলা হিমেল হাওয়ার ছোঁয়ায় শরীরটা জুড়ে যাচ্ছে... 

গাছে-গাছে যেন ভালোলাগা ফলেছে।

সবমিলিয়ে চারদিকের পরিবেশটাকে বড্ড ভালোলাগছে!


(চৌদ্দ/চার/চব্বিশ)

রাত সাড়ে বারোটা|সবুজদের পুকুরপাড়ে|শরীয়তপুর

ভালোলাগার ভালোলাগা



 ঝুম বৃষ্টি, কি যে মিষ্টি! 

এশার নামাজপড়ে বেলকনিতে গেলাম। খুব গরম লাগতেছে। চারতলা থেকে নিচের দিকে তাকাতেই চমকে গেলাম। আরে, রাস্তায় ফোঁটা ফোঁটা জল কেন! ডানে-বামে তাকলাম, পুরো রাস্তা ফাঁকা। দু'একটা প্রাইভেট কার আসছে তো- দ্রুত ছুটছে। পিচঢালা রাস্তায় পানির ফোঁটাগুলো চিকচিক করছে। আকাশের দিকে তাকাতেই হৃদয়ে ঢেউ খেয়ে গেলো। এ-যে বৃষ্টি নামতেছে! লোহার গ্রিলের ভিতর দিয়ে হাতদুটো বাহিরে বাড়িয়ে দিলাম। মুক্তোসম বৃষ্টির ফোঁটাগুলো, হাতদুটো চুমতে লাগলো। হিমশীতল বৃষ্টির ফোঁটার ছোঁয়ায়, বদনে কি-এক অনুভূতি সৃষ্টি হলো। একেক বৃষ্টির ফোঁটায়, হাতের লোমগুলো শরীরের সাথে লেপ্টে যাচ্ছে। অপলক তাকিয়ে আছি আমি। হাতকে ছুঁয়ে দেয়া প্রতিটি বৃষ্টির ফোঁটা, যেন হৃদয়কে ছুঁয়ে দিচ্ছে। ঝুম বৃষ্টির ছোঁয়ায়, বড়বড় বিল্ডিংগুলো চিকচিক করছে। মনে হয়, তারাও আমার মতো পুলকিত। নিচে তাকিয়ে দেখি, ছাতামাথায় একজন হেঁটে যাচ্ছে। দুতলার মাথা ছুঁয়েছে— নিমগাছটার পাতাগুলো বৃষ্টির ফোঁটায় আলতো দুলছে। সেই সাথে, জ্বলজ্বল করে উঠেছে। পার্শ্বের বিল্ডিং-এর দেয়াল বেয়েপড়া, বৃষ্টির ফোঁটাগুলো, বাতির আলোয় খশেপড়া তারার মতো ছুটছে। পশ্চিমাকাশে— থেকে থেকে ঈষৎ বিজলী চমকাচ্ছে। সবমিলিয়ে চারদিকের পরিবেশকে, খুব মায়াময় লাগছে। ফুলের টবগুলোতে যেন, থোকা-থোকা ভালোলাগা ফলেছে!


আস্তিক

 আমরা দুঃখ-কষ্টের উদরে জন্ম নেয়া মানব সন্তান। তোমরা সুখসাচ্ছন্দ্যের ছায়াতলে বেড়েওঠা মানুষ্যপুত্র। দুঃখ-কষ্ট আর যাতনা আমাদের মাতৃকোল। কষ্ট তো ঈশ্বরের ছায়া; মৃত্যু হৃদয়ের চারণভূমিতে যা চাষ করা যায় না। আমরা বেদনাকাতর আত্মা নিয়ে বেড়েওঠি; আর বেদনা তো অনেক ভাড়ী পদার্থ। ক্ষুদ্র হৃদপিণ্ড যার ভারত্ব বহন করতে পারে না। আমরা অনবরত চোখ দিয়ে রক্ত ঝরাই। চিৎকার করে বিলাপ করি। আমাদের অশ্রুজলে যারা একবার স্নান করবে— আজন্ম শুদ্ধতার পরশ অনুভব করবে। তোমরা আমাদের ইতিকথা, পরিচয়-পরিচিতি জানো না। তবে আমরা তোমাদের চিনি। তোমরা তো জীবনচক্রের নদীতে দ্রুতই আবর্তিত হও। পিছন ফিরে একবারও তাকাও না— আমরা কোথায়। নদীর কূলে বসে আমরা তোমাদের দেখতে পাই। শুনি তোমাদের হৃদয়ের ফিসফিসানী। তোমরা ভ্রুক্ষেপ করো না আমাদের আত্ম চিৎকারের প্রতি; কারণ কালের ড্রেজারের আওয়াজ ভরে দিয়েছে তোমাদের কর্ণকুহর। আমরা শুনি অবেলায় তোমাদের গান। নিঃসীম রজনীর স্পষ্ট সুর লহরি উজার করে দিয়েছে আমাদের কর্ণ দেয়াল। আমরা তোমাদের দেখি। তোমরা দাঁড়িয়ে আছো অন্ধকারাচ্ছন্ন নিবিড় কুহেলিকায়। আমরা বাসকরি আলো ঝলমলে আঁধারের পৃথিবীতে। তোমরা আমাদের দেখবে কি করে! আমরা দুঃখিনী মায়ের সন্তান। আমরা আম্বিয়া। আমরা উন্মাদ করি। কালের গিটারে মিউজিক বাজিয়ে চলি সারাকাল। আমরা আপন হৃদয়ের সুতোয় গেঁথে চলি ঈশ্বরের জামা। হৃদয়ের বুনোফুল দিয়ে ভরে দেই ফেরেশতাদের অঞ্জলি। তোমরা তো আনন্দ-উল্লাসে, উদাসীনতার বুক চিরে জন্মানো— জাগ্রত ভোগের প্রভু! নিজেদের বুক ফেঁড়ে, হৃদপিণ্ড বের করে, মেলে ধরো নির্জনতার কাছে। কারণ নির্জনা প্রেমিকার হাত বড় কোমল! অজ্ঞতার দীক্ষা নিয়ে আনন্দকে খুঁজে বেড়াও। অজ্ঞতার তাজমহল তো আয়না থেকে শূন্য। কীভাবে দেখবে নিজেদের শুঁয়ো মুখো চেহারা!

আক্ষেপ



 আচ্ছা, মানুষের জীবন এমন কেন? আঁকাবাঁকা! বেদনাবিধুর! বিষাদময়! রেললাইনের মতো সমান্তরাল ধারায় কি জীবন চলতে পারে না? যদি এমন হতো- মানুষের জীবনে কোন দুঃখই থাকতো না। থাকতো শুধু Low-income, আরাম ও আয়েশ।

ফুটপাতে শুয়ে থাকা লোকটাও মানুষ। সুতরাং তাকে দেখে নাক ছিটকাবেন না।

স্মৃতিগুলো আজ মনের গহীনে লুকিয়ে আছে...

শৈশবের সেই নির্মল আনন্দ, কৈশোরের দুরন্তপনা, আর তারুণ্যের দুঃসাহসী স্বপ্ন—সব মিলিয়ে এক মায়াবি জগতের মধ্য দিয়ে এসেছি। কত আশা, কত স্বপ্ন, কত অভ...

জনপ্রিয়গুলো দেখুন